ডেস্ক রিপোর্ট:

‘পকেট কাটছে ইউনিলিভার, ভোক্তা অধিদপ্তরে তলব’ শীর্ষক প্রতিবেদন ও এই প্রতিবেদন নিয়ে ঢাকাপ্রকাশ-এর ফেসবুক পেজে প্রকাশিত পোস্টারের জন্য মামলার হুমকি দিয়েছে ইউনিলিভার বাংলাদেশ। গত ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকাপ্রকাশ-এ প্রতিবেদন ও পোস্টার প্রকাশিত হয়।

 

ঢাকাপ্রকাশ-এর প্রধান সম্পাদক মোস্তফা কামাল বরাবরে পাঠানো ইউনিলিভারের আইন বিভাগের পরিচালক ও কোম্পানি সেক্রেটারি এস ও এম রাশেদুল কাইয়ুম স্বাক্ষরিত চিঠিতে মামলার হুমকি দেওয়া হয়েছে। চিঠিটি গত বৃস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাতে মেইলে পাঠানো হয়।

ওই চিঠিতে বলা হয়, ইউনিলিভারের বিরুদ্ধে প্রচারিত অবমাননাকর রিপোর্ট ও পোস্টার অবিলম্বে প্রত্যাহার এবং একই সঙ্গে ক্ষমা চাইতে হবে। অন্যথায় ইউনিলিভার বাংলাদেশ ঢাকাপ্রকাশ-এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।

 

বিষয়টি নিয়ে ঢাকাপ্রকাশ-এর প্রধান সম্পাদক মোস্তফা কামাল বলেন, ইউনিলিভার কর্তৃপক্ষ গায়ের জোরে কথা বলছে। একদিকে তারা মানুষের পকেট কেটে নিচ্ছে অন্যদিকে ঢাকাপ্রকাশ-কে মামলার ভয় দেখাচ্ছে। এটা গণমাধ্যমকে দমিয়ে রাখতে বহুজাতিক কোম্পানির পরিষ্কার হুমকি ছাড়া আর কিছু নয়।

 

তিনি বলেন, ’ঢাকাপ্রকাশ-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনটি ঢাকাপ্রকাশ-এর নিজস্ব কোনো বক্তব্য নয়। এটি মূলত সরকারের একটি প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালকের বক্তব্যের বরাতে প্রতিবেদন। জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বিভিন্ন গণমাধ্যমের সামনে এই বক্তব্য প্রকাশ করেছেন।’

 

৬ সেপ্টেম্বর ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব এএচইএম সফিকুজ্জামানের বক্তব্যও ঢাকাপ্রকাশ-এর প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।

 

এর আগে, ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে ব্যবসা পরিচালনাকারী বিভিন্ন সুপারশপের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। বিভিন্ন গণমাধ্যমের উপস্থিতিতে ওই মতবিনিময় সভায় মহাপরিচালক বলেন, অভিযোগ রয়েছে, ইউনিলিভারসহ বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ভোক্তার পকেট কাটছে।

 

তিনি বলেন, ‘বুধবার বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভারসহ বড় বড় প্রতিষ্ঠানকে ডাকা হয়েছে। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হবে কেন সাবান, ডিটারজেন্ট, পেস্টের দাম এত বাড়ল।, এটা কতটুকু যৌক্তিক তা নিয়ে তাদের জিজ্ঞেস করা হবে। তাদের চিঠি দিয়ে দুই বছর, এক বছর, ছয় মাস ও আজকের পণ্য তালিকা চাওয়া হয়েছে। দেখা হবে দামের পার্থক্য কত হয়েছে। এই পার্থক্য যৌক্তিক কি না তা খতিয়ে দেখা হবে।’

 

তিনি বলেন, ’এই যে, ইউনিলিভার ও বিভিন্ন কোম্পানি দাম বাড়িয়ে দিল…কোনো সংস্থা বা কোনো প্রতিষ্ঠান বা কেউ কী এখানে দেখভাল করার আছে। আমার কাছে মনে হল, এখানে বড় ধরনের টাকা ভোক্তার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।’

 

তিনি আরও বলেন, ইউনিলিভারে সরকারের ৪০ শতাংশ শেয়ার আছে। কাজেই ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণা করলে অবশ্যই দেখার আছে।

 

ভোক্তা অধিদপ্তরের কাছেও এই অভিযোগ এসেছে, পঞ্চান্ন টাকার বড় লাক্স সাবান বিক্রি করা হচ্ছে ৭৫ টাকায়। ৯০ টাকার হুইল পাউডার ১৪২ টাকা। ২১০ টাকার সার্ফ এক্সএলের দাম ২৮০ টাকা। ১০ টাকার মিনি সাবান ১৫ টাকা। এভাবে সব পণ্য ইউনিলিভারসহ অন্য কোম্পানি বেশি দামে বিক্রি করছে। বাধ্য হয়ে বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) ইউনিলিভারকে তলব করা হয়েছে।

 

মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘কেউ অভিযোগ করুক বা না করুক একজন ভোক্তা হিসেবে আমারও দায়িত্ব আছে বাজারে কী হচ্ছে তা দেখার। ভোক্তার পকেট যাতে কম কাটা হয় সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইউনিলিভার যা করছে এটা আগে কেউ কখনো দেখেনি। তাইতো ভোক্তাদের পকেট থেকে টাকা চলে যাচ্ছে। তা দেখা হবে।’

 

এই প্রতিবেদনটি ছিল একান্তই ভোক্তা অধিকারের বৈঠকে প্রাপ্ত তথ্য এবং ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালকের বক্তব্যের বরাত দিয়ে। এখানে ঢাকাপ্রকাশ নিজস্ব কোনো অনুসন্ধান করেনি। কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠানকে হেয় করার জন্য কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি।

 

প্রতিবেদনের স্বচ্ছতার স্বার্থে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ঢাকাপ্রকাশ ইউনিলিভারের পরিচালক (ব্র্যান্ড অ্যান্ড কমিউনিকেশন) শামিমা আখতারের বক্তব্যও প্রকাশ করেছিল। যা না করলেই হতো।

 

ইউনিলিভারের মামলার হুমকি সত্যিই গণমাধ্যমের জন্য উদ্বেগের বিষয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, যদি কোনো আইনী নোটিশ পাঠাতে হয় কিংবা কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হয় তাহলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও তার ডিজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। এখানে ঢাকাপ্রকাশ বা অন্য কোনো গণমাধ্যমকে জানানোর কোনো সুযোগ নেই।

 

এদিকে ভোক্তা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আফরোজা রহমান এক চিঠিতে ৭ সেপ্টেম্বরের সভায় সংশ্লিষ্টদের সাবান, ডিটারজেন্ট, পেস্ট, লিকুইড ক্লিনারসহ বিভিন্ন পণ্যের মূল্য তালিকা নিয়ে আসতে নির্দেশ দেন।